মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন স্বামী বিবেকানন্দ। তার আগে তিনি বীজ বপন করে যান বিশ্বব্যাপী এক আধ্যাত্ম-সাম্রাজ্যের। তাঁর জীবনকাহিনি পড়তে বসলে সবার আগে যে অনুভূতি জাগ্রত হয়, তা হল — বিস্ময়। কীভাবে, কোন অতিলৌকিক শক্তির বলে এক যুবক যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বজয় করে বসেন, তা ভাবতে বসলে দিশাহারা লাগে। স্বামীজির জীবন যতটা আশ্চর্যের, তাঁর প্রয়াণ ঠিক ততটাই রহস্যময়। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তাঁর মতো এক যোগীপুরুষের প্রয়াণ সত্যিই বিস্ময়কর। স্বামীজির সহগামী গুরুভ্রাতা এবং তাঁর শিষ্যদের সাক্ষ্য থেকে যা জানা যায়, তা অসামান্য রহস্যের অবতারণা করে।
★★ ১৯০২ সালের, ৪ জুলাই প্রয়াত হন স্বামীজি। অথচ প্রয়াণের অব্যবহিত আগে তেমন কোনও অসুস্থতা তাঁর ছিল না।
★★ প্রয়াণের দিন খুব ভোরে তিনি ঘুম থেকে ওঠেন, তার পরে বেলুড় মঠের উপাসনা-মন্দিরে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধ্যান করেন।
★★ সেদিন তিনি তাঁর শিষ্যদের শুক্লযজুর্বেদ ও যোগদর্শন সম্পর্কে শিক্ষা দেন। পরে গুরুভ্রাতাদের সঙ্গে বৈদিক কলেজের প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
★★ এর পরে তিনি সন্ধে ৭টা নাগাদ তাঁর কক্ষে চলে যান। এবং নির্দেশ দেন, কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় রাত ৯টা ১০ মিনিট নাগাদ তিনি দেহত্যাগ করেন।
★★ ভারতীয় আধ্যাত্ম জগতে এমন প্রয়াণ কিন্তু দুর্লভ নয়। বহু যোগীপুরুষই এমন ধ্যানরত অবস্থায় তাঁদের পার্থিব তনু ত্যাগ করেছেন। স্বামীজি যে সেই পরম্পরারই একজন, সে কথা তাঁর শিষ্যরা বলেন।।
★★ তাঁর শিষ্যদের মতে, স্বামীজির ‘মহাসমাধি’ হয়েছিল। তআর প্রয়াণের প্রকৃত কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। কিন্তু এই ঘটনাই যে মহাসমাধিপ্রাপ্ত আধ্যাত্মপুরুষদের ঘটে, তার সাক্ষ্য দেয় হাজার হাজার বছরে ভারতীয় সন্ন্যাস-ঐতিহ্য। সমাধি অবস্থায় ব্রহ্মরন্ধ্রভেদ ঘটে পার্থিব তনুত্যাগের উদাহরণ আগেও ঘটেছে। স্বামীজির প্রয়াণও সেই প্রকার।
★★ রহস্য এখানেই, দেহত্যাগের কিছুদিন আগে থেকেই তিনি নিজের অনুপস্থিতির কথা বলছিলেন। সর্বোপরি, প্রয়াণের ক’দিন আগে তিনি তাঁর শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতাকে এক ভোজে আপ্যায়িত করেন। ভোজ শেষে তিনি ভগিনীর হাত ধুয়ে দিতে গেলে ভগিনী বাধা দেন। স্বামীজি বলেন, যিশুও তো তাঁর শিষ্যদের হাত দুইয়ে দিয়েছিলেন। নিবেদিতা ভেঙে পড়েন। কারণ, যিশু তাঁর শিষ্যদের হাত ধুইয়ে দিয়েছিলেন লাস্ট সাপারের পর। পরের দিনই তাঁকে রোমান সেনা গ্রেফতার করে। এবং ঘটনা গড়ায় ক্রুসিফিকেশনের দিকে।
রহস্য এখানেই, কী করে স্বামীজি জেনেছিলেন তাঁর দেহত্যাগের কথা। এখানে নিরুত্তর হতে হয়। ফিরে তাকাতে হয় রামপ্রসাদ সেন, তৈলঙ্গ স্বামী বা সন্ত কবীরের দেহত্যাগের কিংবদন্তির দিকে।