সবার আগে জানুন, শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনকে কেন জন্মাষ্টমী বলা হয়? :::: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার। তার পবিত্র জন্মতিথিকে বলা হয় জন্মাষ্টমী। এই। উৎসবটি অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় উৎসব। বিভিন্ন ভাবে দিনটিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যেমন, কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তীসহ বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়।
শ্রীকৃষ্ণকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তারা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই এ মহাবতার স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ গীতাও সেই সাক্ষ্য বহন করছে।
পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হলে জন্মাষ্টমী পালিত হয়। আর অষ্টমী তিথিতে আর্ভিভূত হন বলে এই বিশেষ দিনকে জন্মাষ্টমী বলা হয়।
★★ জন্মাষ্টমীর গুরুত্ব ★★
কথিত, অত্যাচারী রাজা কংসের রাজত্বে মথুরাবাসীর দুঃখের সীমা ছিল না। বোন দেবকীর সঙ্গে বাসুদেবের বিয়ের সময় আকাশ ভেঙে শোনা যায় দৈববাণী। দেবকীর অষ্টম গর্ভে জন্মানো সন্তান কংসকে হত্যা করে উদ্ধার করবে মথুরাবাসীকে। দৈববাণী শুনে দেবকী, বাসুদেবকে সেই মুহূর্তেই কারাগারে বন্ধ করেন কংস।
দ্বাপর যুগে মর্ত্যে আবির্ভাব বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের। কারাগারে দেবকীর ষষ্ঠ সন্তানকেও বাসুদেব কারাগারে হত্যা করার পর সপ্তম সন্তান মারা যায় গর্ভেই। কথিত আছে এই সপ্তম সন্তানই বৃন্দাবনে রোহিনীর গর্ভে বলরাম রূপে জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণের জন্মের পর বাসুদেব দেবানুকূল্যে শ্রাবণের ঝড়, বৃষ্টি কবলিত রাতে শিশু কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে নন্দরাজ, যশোদার কাছে দিয়ে আসেন। কৃষ্ণকে মাথায় নিয়ে যমুনা পারপারের সময় শেষনাগ শিশু কৃষ্ণকে রক্ষা করেন দুর্যোগের হাত থেকে। বৃন্দাবনে যশোদার সদ্যোজাতের সঙ্গে কৃষ্ণকে বদলে দিয়ে আসেন। দেবকীর কোলে যশোদার সদ্যোজতকে দেখে কংস তাকে বধ করতে উদ্যত হলে শূন্যে মা দুর্গার রূপ ধারণ করেন সেই সদ্যোজাত কন্যা। শোনা যায় দৈববাণী, কংসকে হত্যা করে মথুরাবাসীকে উদ্ধার করতে কৃষ্ণ পৃথিবীকে আবির্ভূত হয়েছেন।
★★ জন্মাষ্টমী নিয়ে কিছু অজানা তথ্য ★★
◆◆ কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীতে জন্মাষ্টমী তিথি পালিত হয়। মনে করা হয়, ৩২২৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ১৯ জুলাই ভগবান কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। তিনি যাদব বংশের অবতার।
◆◆ কৃষ্ণ শব্দের সংষ্কৃত অর্থ হল কালো। কৃষ্ণের মূর্তিগুলিতে তাঁর গায়ের রং সাধারণত কালো এবং ছবিগুলিতে নীল দেখানো হয়ে থাকে। তার রেশমি ধুতিটি সাধারণত হলুদ রঙের এবং মাথার মুকুটে একটি ময়ূরপুচ্ছ শোভা পায়। কৃষ্ণের প্রচলিত মূর্তিগুলিতে সাধারণত তাকে বংশীবাদক এক বালকের বেশে দেখা যায়।
◆◆ রাখী বন্ধনের ঠিক ৮ দিন পরে সারা ভারতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উত্সব পালন করা হয়। দক্ষিণ ভারতেও পালন করা হয় গোকুলাষ্টমী। মহারাষ্ট্রে এই উত্সব পালিত হয় দহি হান্ডি ফাটিয়ে।
◆◆ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধা, বলরাম ও সুভদ্রার পুজোও করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল মথুরায়। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন গোকুলে। সেজন্য মথুরা ও বৃন্দাবনে এই উত্সব সবচেয়ে বড় করে হয়।
◆◆ শ্রীকৃষ্ণের মোট ১০৮টি নাম রয়েছে। মথুরায় কমপক্ষে ৪০০টি মন্দির রয়েছে। যেখানের প্রত্যেকটি মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা হয়।
◆◆ কৃষ্ণের নাম নিয়ে যে নৃত্য রয়েছে তার নাম রাসলীলা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের পরাস্ত করতে অর্জুনকে যে কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, সেই কৃষ্ণের বাণী শ্রীমদ্ভগবত গীতা নামে পরিচিত।
◆◆ শ্রী কৃষ্ণের ভক্ত, বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও ইস্কন অনুগামীরা ধুমধাম করে জন্মাষ্টমী পালন করেন। এ দিন ছাপ্পান্ন ভোগে গোপলাকে তুষ্ট করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়, ধনলাভও হয়। জেনে নিন এমনই ৫ উপাচার যা ধনলাভের আশায় করে থাকেন ভক্তেরা।
◆◆ ধনলাভ করার জন্য জন্মাষ্টমীর দিন সকালে স্নান করে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তিতে হলুদ মালা দিয়ে পূজার্চণা করার কথা রয়েছে হিন্দু পুরাণে।
◆◆ শ্রী কৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার। তাই হিন্দু পূরাণ মতে জন্মাষ্টমীর দিন দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ বাজিয়ে শ্রী কৃষ্ণের অভিষেক করলে তার সঙ্গে মা লক্ষ্মীও প্রসন্ন হন। মনষ্কামনা পূর্ণ হয়।
◆◆ হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জন্মাষ্টমীর দিন সাদা মিষ্টি, সাবুদানার ক্ষীর দিয়ে ভোগ দিলে কৃষ্ণ প্রসন্ন হন।
◆◆ হিন্দু পুরাণে রয়েছে জন্মাষ্টমীর দিন একটি ঝুনো নারকেল ও ১১টি বাদাম সহযোগে কৃষ্ণের অভিষেক করলে সব কাজ বাধামুক্ত হয়।
◆◆ কর্মক্ষেত্রে উন্নতি লাভের জন্য জন্মাষ্টমীর দিন ক্ষীর বানিয়ে ছোট মেয়েদের খাওয়ানোর পরামর্শ রয়েছে হিন্দু পুরাণে। এর ফলে নাকি কৃষ্ণের বিশেষ দৃষ্টি প্রাপ্ত হন ভক্ত।
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে।
গোপেশ গোপীকাকান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে।
ওঁ ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ।জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমো নমঃ।