যুদ্ধ চাই, বদলা চাই? ৪২ জন ভারতীয় জাওয়ানের ছিন্ন ভিন্ন দেহ ছবি দেখে রক্ত গরম আমাদের সবার। হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেনা জাওয়ানরা যে বড়োই অন্তরের গভীরে বাস করে। তাদেরকে আঘাত মানে আমাদের অন্তরের আঘাত।
কিন্তু আমরা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এই ক্ষেত্রে ভারত সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর আমরা বিশ্বাস রাখবো।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই আক্রমন কাশ্মীরের জাতিস্বত্বার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এই আক্রমণ করেছে পাকিস্তানের জইশ-ই- মহম্মদ নাম উগ্রপন্থী সংগঠন। এরা কাশ্মিরের জাতিস্বত্বার লড়াইয়ে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কে উস্কানি দেয় এবং এরা কাশ্মীর কে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানে জুড়তে চাওয়া এক আদ্যোপান্ত ধর্মীয় জঙ্গী সংগঠন। যারা জিহাদের নামে গনহত্যা করে।
•আমাদের কি করা উচিৎ নয়?
>১. এই মুহুর্তে সব থেকে বড়ো কাজ একে অপরকে আবেগে দোষারোপ না করা ও মাথা ঠান্ডা রাখা। রাষ্ট্রের মধ্য আমরা নিজেদের অধিকারের লড়াইয়ে বিভক্ত হলেও পররাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমরা ভারতীয় এক এবং অভিন্ন।
২. দ্বিতীয় কিছু ভারতের কিছু রাজনৈতিক উগ্র হিন্দু ও মুসলিম সংগঠন ও তার সদস্যরা এটা ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করবে তা আমাদের প্রতিহত করতে হবে। তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। তারা কিন্তু রাজনীতি করছে। ধর্ম ও রাজনীতি এক ছাতার তলায় আসতে পারে না।
৩. হাতে গোনা কিছু অশিক্ষিত মানুষ রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য করবে। হয় ফুটেজ পাওয়ার জন্য অথবা তারা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। তাদের রাষ্ট্র আইন ব্যবস্থা শাস্তি দেবে। তাদের কথা ভেবে নিজেরা উগ্র হয়ে যাবো না। এইরকম মানুষ সব দেশেই থাকে। কিছুদিন আগেও পাকিস্তানে এক বিরাট কোহলি ভক্ত নিজের ঘরের ছাদে ভারতের পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিলো। পাকিস্তানে তার উপর রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা চলছে।
৪.যতবার জঙ্গী আক্রমণ হয়েছে ততবার কাশ্মীরিদের উপর আমাদের সব রাগ পড়েছে এটাই কিন্তু জইশ ই মহম্মদ চাই। তাদের উদ্দেশ্যই হলো কাশ্মীরকে ভারত থেকে ছাড়িয়ে পাকিস্তানে জোড়া। অধিকাংশ কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়। তারা আমাদের সাথেই থাকতে চাই। কিন্তু আমরা কি তাদের নিজের ভাবি? শুধু জায়গা টা নিজের ভাবি। অথচ নিরপেক্ষভাবে যদি বলি কাশ্মীরের ইতিহাস পড়লে জানা যায় কাশ্মীর ভারত বা পাকিস্তানের অংশ ছিলো না। ১৯৪৭ এর নেহেরু-হরি সিং (ভারত-কাশ্মীর) চুক্তি বা জিন্না-হরি সিং(পাকিস্তান-কাশ্মীর) চুক্তি দুই রাষ্ট্রই জোরপূর্বক ভেঙে ১৯৫৪ তে দখল করে।সেই ইতিহাসে যাচ্ছি না। এই কাশ্মীর সমস্যা উৎস কোথায় অধিকাংশ মানুষ জানে না, নিজেকে প্রশ্ন করুন ইতিহাস জানেন? কিন্তু আমরা কাশ্মীর সম্বন্ধে বিষ উগরে থাকি। সকল কে মাথা ঠান্ডা রেখে যুক্তি দিয়ে ভাবার অনুরোধ রইলো।
•ভারতের-পাকিস্তানের যুদ্ধে কে জিতবে?
>ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জিতবে জইশ- ই-মহম্মদ। অবাক লাগলো? একটু ব্যাক্ষা করি। এই জঙ্গীদের কি পাকিস্তানের মানুষের প্রতি কোনো ভালোবাসা আছে? না নেই। কারন এরা পাকিস্তানেও সন্ত্রাস চালায়। নিজেদের ছেলেমেয়েদের বোম দিয়ে উড়িয়ে দেয়। কয়েকদিন পর পর এরা স্কুল ও মজসিজে বিস্ফোরণ ঘটায়। আপনি কি খবর রাখেন? পাকিস্তানের মানুষদের কি এদের প্রতি ভালোবাসা আছে? না নেই, তার প্রমান হলো জৈইশ-ই মহম্মদের আরেক ভাই ও মুম্বাই হামলার পান্ডা সৈয়দ হাফিজের লস্কর-ই-তৈবার রাজনৈতিক শাখা মিল্লি মুসলিম লিগ ২৬৫ সিটেই প্রার্থী দিয়েছিলো।একটি আসনেও জেতেনি। মানুষ চায় না তাদের, মানুষ ছু্ঁড়ে ফেলেছে।
এবার আপনি প্রশ্ন করবেন পাকিস্তান সরকার এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেনো? তার কারন পাকিস্তান সেনা ও পাকিস্তান সরকারের মধ্য বিভেদ ও একে অপরকে সমর্থন না করা।এবং খুব শক্তিশালী পররাষ্ট্র দ্বারা এই জঙ্গী সংগঠন গুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। আগে করতো আমেরিকা আর এখন করে চীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই পাকিস্তান সরকার এই জঙ্গীদের ব্যাপারে নীরব থেকেছে এবং মেনে নিচ্ছে। ওই যে জঙ্গীদের হাতে স্নাইপার নামক অস্ত্র দেখা যাচ্ছে যার দাম ১০ লক্ষেরও বেশি। আসে কোথা থেকে? কে দেয়? প্রশ্ন করুন। জানার চেষ্টা করুন। পাকিস্তানের মানুষরাও যে অসহায়। আমরা যেমন ভারতের এই নোংরা রাজনৈতিক বেড়াজাল কে ধ্বংস করতে পারছি না, ওরা সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হতে পারছেনা। এটা ভারত সরকারও ভালোভাবে জানে। তাই আমার বিশ্বাস ভারত সরকার যুদ্ধে যাবে না। তাই যারা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক জেনেছেন তারা দেখেছেন সিভিলিয়ানদের আঘাত না করে গনতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে জঙ্গী ডেরা গুড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। পৃথিবীর কাছে গর্বের চরম নিদর্শন রেখেছে। মনে রাখবেন সন্ত্রাসের উত্তর কখনোই সন্ত্রাস হতে পারে না। আমরা পরিনত গনতান্ত্রিক দেশ। এটাই আমাদের বিশ্বের কাছে অহংকার। ভারত রাষ্ট্রের ক্ষমতা গোটা বিশ্ব জানে।
• যদি ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়েই গেলো তাতে কি ঘটতে পারে?
>ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারত পাকিস্তান দুই রাষ্ট্রই শেষ হয়ে যাবে। তার কারন পরমাণু যুদ্ধ। পাকিস্তান ভালোভাবে জানে সৈন্যবল বা অস্ত্রশস্ত্রের দ্বারা ভারতের সাথে পেরে ওঠা যাবে না। তাই তারা যুদ্ধে গেলে পরমানু যুদ্ধেই যাবে। ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পাকিস্তান। আর পাকিস্তানের পরমানু শক্তি ভারতের তুলনায় বেশি। এই যুদ্ধে যে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। ১৯৪৫ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা, জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে যে বিস্ফোরণ করেছিলো তার প্রভাবে ৭৩ বছর পরও সেখানে বিকলাঙ্গ বাচ্চা জন্ম নেয়। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব এতোটাই। যে রাষ্ট্র দেওলিয়া হয়ে যেতে বসেছে তাদের সাথে লড়াই করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আরও একটা বিষয় মাথা রাখতে ভারতের আরেক বড়ো শত্রু চীনের হাত রয়েছে পাকিস্তানের মাথায়। এই ঘটনায় সব রাষ্ট্র নিন্দাই সরব হলেও চীন নীরব থেকেছে। ভারতের সেরকম শক্তিশালী মিত্রদেশ কেউ নেই। যারা ভাবেন আমেরিকা ও ইজরায়েল পাশে থাকবে নিঃস্বার্থ ভাবে তাদের প্রতি সমবেদনা রইলো। রাশিয়া, জাপান এরা সাহায্য করলেও যুদ্ধ ভারতকেই করতে হবে। অনেক ছোটো ভারতের মিত্র হলেও তারা কিন্তু ভারতের হয়ে যুদ্ধ করবেনা।
• তাহলে কি আমাদের জাওয়ানদের শহীদ হওয়াটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো? আমরা বদলা চাই।
>বদলা তো চাই। কিন্তু তার পদ্ধতি নির্ধারনে প্রয়োজন আছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবো বললে করা যায় না। তার জন্য পরিকল্পনা লাগে সময় নিয়ে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে জঙ্গীরাও প্রস্তুত। সেটা নিয়েও ভাবছে আমাদের সৈন্যবল। পাকিস্তান জঙ্গী নিয়ন্ত্রন করতে না পারার দায়ে আমরা ভুগবো কেনো। এখন পরমাণু যুগে যুদ্ধ ছাড়া শত্রুদের শিঁড়দাড় ভেঙে দেওয়ার পদ্ধতি হলো অর্থনৈতিক যুদ্ধ (Economical War)। এটা আমার কথা নয়। আন্তর্জাতিকভাবে এই পন্থায় ঘুরছে। পাকিস্তান কে কিভাবে অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল করা যাবে, অর্থ ছাড়া তারা বেচেঁও মারা যাবে।অন্য রাষ্ট্র যাতে কোনোভাবেই সাহায্যে করতে না পারে, সেই ব্যাপারে সেইসব রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন নিশ্চিত করা। ইনটেলিজেন্সের সাহায্যে কারা এই অস্ত্র দিয়ে উগ্রপন্থীদের পোষন করছে তাদের বিশ্বের দরবারে প্রমানসহ তুলে ধরা। তাছাড়াও আরও অনেক পদ্ধতি আছে।
ভারত নিশ্চয় যোগ্য জবাব দেবে। আমাদের কর্তব্য সবাই এক হয়ে আমাদের সরকার ও সেনাদের এবং শহীদ হয়ে যাওয়া জাওয়ানদের পরিবারে পাশে থাকা।
জয় ভারত।