২৪ শে অক্টোবর ১৯১৪ সালে ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের মাদ্রাজে এক আইনজীবীর ঘরে জন্ম নেন লক্ষি। বাবার নামের শেষ অংশ মিলিয়ে তার নাম ছিল Lakshmi Swaminathan । ১৯৩৮ সালে গাইনোকোলজির উপর মাদ্রাজ মেডিকেল থেকে MBBS ডিগ্রী নিয়ে চেন্নাইয়ের এক হাসপাতালে ডাক্তারি পেশা শুরু করেন।
১৯৪০ সালে তিনি সিংগাপুরে গিয়ে একটি ক্লিনিক খোলেন যার বেশিরভাগ রোগীই ছিল অনাবাসী ভারতীয় শ্রমিক। সেখানে নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসুর Indian National Armyর কিছু সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয় (যা ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ নামেও সমধিক পরিচিত) ।
সে সময় সিংগাপুর ছিল এশিয়ায় ব্রিটিশ সৈন্যদের সবচেয়ে বড় বেস ক্যাম্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটেন-জাপান যুদ্ধে সিঙ্গাপুর জাপানের অধিকারে চলে যায় ( ১৯৪২ )। যুদ্ধপরবর্তী হাজার হাজার আহত সৈন্যদের চিকিৎসা দেন লক্ষি, যাদের মধ্যে অনেক ভারতীয় সৈন্য ছিল। জাপানের কাছে ব্রিটিশদের হার এবং সামরিক সামর্থ দেখে সেখানে অবস্থানরত ভারতীয় বিপ্লবীরা চাইছিল জাপানের হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ভারত থেকেও ব্রিটিশদের তাড়ানো সহজ হবে।
এর পক্ষে মতের পাল্লা ভারী হতে থাকলে ১৯৪৩ সালের ২ জুলাই সুভাস বোস সিঙ্গাপুর গিয়ে তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। সুভাস বোস চাইছিলেন নারীদের নিয়ে একটি সামরিক রেজিমেন্ট খুলতে। লক্ষি সেটা জানতে পেরে তার সাথে দেখা করে তার আগ্রহের কথা জানান । সুভাস বোস তাকে সমর্থন দেন এবং তাকে ‘’ক্যাপ্টেন লক্ষি “ উপাধী দেন ( আজও তাকে এই নামেই ডাকা হয় ) । তার রেজিমেন্টের নাম রাখা হয় Rani of Jhansi Regiment ।
১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরে জাপানিজ আর্মির সাথে Indian National Army বার্মা অভিমুখে রওয়ানা হয়। ততদিনে জার্মানী নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি পরাজয়ের আঁচ পেয়ে গেছে। INA বুঝতে পারলো জাপানের আশা করে লাভ নেই । ফলে তারা ভারতে প্রবেশ করে ১৯৪৫ সালের মার্চে মণিপুরের কাছে ব্রিটিশদের সাথে এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে । মে মাসে ক্যাপ্টেন লক্ষি ব্রিটিশদের হাতে বন্দী হন। ১৯৪৬ সালের মার্চ পর্যন্ত তাকে বার্মাতেই বন্দী জীবন কাটাতে হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষ জয়ী হয় তবে ব্রিটিশরা চরম ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়। তাছাড়া উপমহাদেশে তখন স্বাধীনতা আন্দোলন তুঙ্গে । তাই ব্রিটিশদের উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প ছিলনা। ফলে অন্যান্য সকল বিপ্লবীদের সাথে তিনিও জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। ১৯৪৭ সালে তিনি Col. Prem Kumar Sehgal কে বিয়ে করে Lakshmi Sahgal নাম ধারণ করেন।
২০০৬ সালে ৯২ বছর বয়সেও তিনি কানপুরে তার চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখতেন। ২০০২ সালে ভারতের সমস্ত মার্ক্সবাদী দলগুলো একত্রে তাকে প্রেসিডেন্ট পদে নোমিনেট করে। তার প্রতিপক্ষ ড. আবুল কালাম আজাদের কাছে তিনি হেরে যান।
২০১২ সালের ২৩শে জুলাই ৯৭ বছর বয়সে তিনি কানপুরে মারা যান। ১৯৯৮ সালে তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘পদ্মভিবুষণ’ দেয়া হয়।