প্রাচীন কাল থেকেই ইতিহাসে কাশ্মীরকে শারদা দেশ নামে উল্লেখ করা হোতো। কারণ পাক অধিকৃত নীলম নদীর তীরে হিন্দুদের সুপ্রাচীন তীর্থভূমি শারদাপীঠ অবস্থিত। হিন্দু মতে সতীর ডান হাত এই স্থানে পড়েছিল। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই শারদাপীঠ হয়ে উঠেছিল বৌদ্ধদের অন্যতম জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এখানে একসময়,, কলহন,, আদি শঙ্করাচার্য,,, কুমারজীবের মতো পন্ডিতেরা অধ্যাপনা করতেন।পাণিণি সহ অনেক পন্ডিতের লেখা এই মন্দিরে দীর্ঘ সময় রাখাছিল। বর্তমানে এই মন্দির ধ্বংস-স্তুপ ছাড়া আর কিছু নাই।
৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে চীনা পন্ডিত হিউয়েন সাং এখানে দুবছর অধ্যয়ণ করেন। ১১৪২খ্রীষ্টাব্দে কলহনেররাজতরঙ্গিনীতে শারদাপীঠকে হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অষ্টম শতাব্দী তে বাংলাদেশের কয়েকজন পন্ডিত এখানে অধ্যয়ন করতে আসেন বলে রাজতরঙ্গিনীতে উল্লেখ আছে। ১০৩০ খ্রীষ্টাব্দে অলবিরুণী এই শারদা মন্দিরে বিগ্রহ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মূলতানের সূর্যমন্দিরের সাথে এর তুলনা করেছেন। আকবর এর নবরত্ন সভার আবুল ফজলের বর্ণনা করেছেন এই মন্দির চত্বর সোনায় মোড়া ছিল। প্রতি পূর্ণিমার আট দিন পর এই মন্দিরে অলৌকিক ঘটনা ঘটত।
২০১৫সালে কাশ্মীর ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এই মন্দির।
পাক অধিকৃত মুজফফরবাদ থেকে ১৫০কিমি দূরে সমুদ্র পীঠ থেকে ১৯৮১মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শারদাপীঠ।।
কাশ্মীর পন্ডিতেরা এই মন্দির দর্শন করতে পারবেনা বলে সেখান থেকে মন্দির চত্বরের মাটি পাঠিয়ে দেন মন্দিরসংলগ্ন মুসলিম অধিবাসীরা। আবার প্রমাণিত হয়েছে মানবধর্ম সব ধর্মের উর্ধ্বে।।
বর্তমানে করতারপুর করিডোর খুলে যাওয়ায় অনেকে আশার আলো দেখছে।।
কাশ্মীরী পণ্ডিতরা এখন আর এই পীঠ দর্শন করতে পারেন না। তাই সারদা পীঠ সংলগ্ন গ্রামের মুসলিম অধিবাসীরা কিছু দিন আগে এই মন্দির চত্বরের মাটি সংগ্রহ করে পাঠিয়ে ছিলেন কাশ্মীরী পণ্ডিতদের কাছে। হিংসা আর সন্ত্রাস বিদীর্ণ কাশ্মীরে এই সৌজন্যতা আর ভ্রাতৃত্বতার এই নজির বুঝিয়ে দিয়েছিল মানবিকতা এখনও হারিয়ে দিতে পারে বিভাজনের রাজনীতিকে।
কাশ্মীরী পণ্ডিতদের আবেগের বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি এই মন্দির নতুন করে তৈরির দাবি তুলেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা। করতারপুর করিডর খুলে যাওয়ার পর অনেকেই আশাবাদী, হয়তো পাক সরকার এই মন্দির সারাতে নতুন করে উদ্যোগ নিতেও পারে।