পুরীর জগন্নাথ মন্দির ১০৭৮ সালে তৈরি হয়। ১১৭৪ সালে তা মেরামতির পর আজকের জগন্নাথ মন্দিরর রূপ ধারণ করে। এই পুরী জগন্নাথ মন্দিরের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট আছে। যা কিনা অবিশ্বাস্য৷
একনজরে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য:
★আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ায় শুরু হয় রথযাত্রা।
★গুণ্ডিচা মন্দিরে যান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।
★মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ২ কিমি।
★প্রতি বছরই নতুন করে প্রতিটি রথ তৈরি হয়।
★জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ।
★রথে জগন্নাথের সঙ্গী হন মদনমোহন।
★নন্দীঘোষের উচ্চতা ৪৫ ফুট, ১৬ চাকা।
★৮৩২ কাঠের টুকরো দিয়ে গড়া হয় রথ।
★লাল ও হলুদ কাপড়ে সাজানো হয়।
★নন্দীঘোষের সারথির নাম দারুকা।
★রথের মাথায় থাকা পতাকার নাম ত্রৈলোক্যমোহিনী।
★এই রথে ৪ ঘোড়া থাকে।
★জগন্নাথের রথের রশির নাম ‘শঙ্খচূড়া নাগুনি’।
★জগন্নাথের রথে সওয়ার হন আরও ৯ দেবতা।
★এঁদের মধ্যে আছেন গোবর্ধন, কৃষ্ণ, নরসিংহ, রাম, নারায়ণ, হনুমান, রুদ্র।
★জগন্নাথের রথে একজন রক্ষীও থাকেন।
★এই রক্ষীর নাম গারুদা।
★বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ।
★রথে বলভদ্রের সঙ্গী হন রামকৃষ্ণ।
★তালধ্বজের উচ্চতা ৪৪ ফুট।
★এই রথে মোট ১৪ চাকা রয়েছে।
★৭৬৩ কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি হয় রথ।
★লাল ও সবুজ কাপড়ে সাজানো হয় রথ।
★তালধ্বজের সারথির নাম মাতালি।
★তালধ্বজের রক্ষীর নাম বাসুদেব।
★রথের মাথায় পতাকার নাম উন্যানী।
★রথের রশির নাম বাসুকি নাগ।
★বলভদ্রের রথেও ৯ দেবতা থাকেন।
★এঁদের মধ্যে আছেন কার্তিক, গণেশ, সর্বমঙ্গলা, মৃত্যুঞ্জয়, মুক্তেশ্বর।
★তালধ্বজেও থাকে ৪ ঘোড়া।
★সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।
★রথে সুভদ্রার সঙ্গী সুদর্শনা।
★দর্পদলনের উচ্চতা ৪৩ ফুট।
★এই রথে মোট ১২ চাকা রয়েছে।
★লাল এবং কালো কাপড়ে সাজানো হয় রথ।
★দর্পদলনের সারথির নাম অর্জুন।
★দর্পদলনের মাথায় থাকা পতাকার নাম নদম্বিকা।
★রথের রশির নাম স্বর্ণচূড়া নাগুনি।
★সুভদ্রার রথে থাকেন ৯ দেবী।
★এঁদের মধ্যে রয়েছেন চণ্ডী, চামুণ্ডা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, মঙ্গলা, বিমলা।
★সুভদ্রার রথকেও টেনে নিয়ে যায় ৪ ঘোড়া।
★★ কথিত আছে, এক সময় পুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রশি ছুঁয়ে সেই রথের চাকার তলায় আত্মঘাতী হত কোনও এক ভক্ত। কিন্তু কেন এই অদ্ভুত মৃত্যুবরণ? মানুষের বিশ্বাস শ্রীপুরুষোওমের চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গারোহণ নিশ্চিত করা যায়।
★★ শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সনাতন গোস্বামী অসুস্হতার কারণে একবার রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেবের চলন্ত চাকার তলে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন। তখন মহাপ্রভুই তাঁকে বলেন ,‘‘সনাতন !! এ রকম দেহত্যাগে যদি কৃষ্ণকে পাওয়া যেত তাহলে এক মূহুর্তের মধ্যে আমিও আমার লক্ষ জন্ম তাঁর শ্রীচরণে সমর্পন করতাম। কিন্তু দেহত্যাগে কৃষ্ণকে পাওয়া যায় না। এরকম দেহত্যাগ হচ্ছে তমোগুণ। তমোগুণে কৃষ্ণকে পাওয়া যাবে না। ভক্তি ছাড়া, ভজন ছাড়া তাঁকে পাওয়ার উপায় নেই।’’
★★ পুরীর মন্দিরের সুদর্শন চক্র পুরীর যে কোনও জায়গা থেকে তাকালে মন্দিরের চুড়ার সুদর্শন চক্র আপনার সম্মুখীন থাকবে।
★★ হাওয়ার চলন সাধারণত দিনের বেলায় হাওয়া সমুদ্রের দিক থেকে সমুদ্রতটের দিকে আসে। আর সন্ধ্যের সময় সমুদ্রতটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে। কিন্তু পুরীর ক্ষেত্রে তা ঠিক উল্টো। সকালে তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে, এবং সন্ধ্যায় সমুদ্রের দিকে থেকে তটের দিকে হাওয়া বয়।
★★ মন্দিরের সবচেয়ে বড় প্রাসাদটির ছায়া দিনের যে কোনও সময় অদৃশ্য থাকে।
★★ পুরী মন্দিরের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট হল প্রসাদ। সারা বছর ধরেই সমপরিমান প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমান প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ হোক বা ২০ লক্ষ মানুষকে খাওয়ানো হোক তবু প্রসাদ কখনও নষ্ট হয় না বা কখনও কম পড়ে না।
★★ মন্দিরের হেঁশেলে একটি পাত্রের উপর আর একটি এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচের তারপরে। এভাবে করতে করতে সবচেয়ে দেরিতে সবচেয়ে নিচের পাত্রের রান্না হয়।
★★ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে সিংহদ্বারের মন্দিরে প্রবেশ করার পর প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পারবেন না। কিন্তু ওই সিঁড়িটি টপকে গেলে আবার সমুদ্রের শব্দ শুনতে পাবেন। সন্ধেবেলায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।