অযোধ্যায় ঐতিহাসিক মুহুর্তের অপেক্ষা। কয়েক ঘণ্টা বাদেই ভূমি পূজা হবে রাম জন্মভূমিতে। আর সেখানেই গড়ে উঠবে রামের মন্দির। বহু বছর ধরে চলেছে এই অযোধ্যা মামলা। রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ, এই বিতর্ক বহু বছরের।বাবরের সেনাপতি মীর বাকি ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর অবস্থিত বাবরি মসজিদ নির্মাণের কথা আছে। বিশ্বাস করা হয়, এ বাবরি মসজিদ যে স্থানে অবস্থিত ছিল সেটাই ছিল হিন্দু ধর্মের অবতার রামের জন্মস্থান। হিন্দুরা দাবি করে করে মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছে এই মসজিদ। ১৮৫৩ সালে প্রথম এই ইস্যুতে বিরোধ বাঁধে। ভারতবর্ষের বুকে যুগে যুগে বহু বিদেশি জাতি আক্রমন করেছে এবং ভারতবর্ষের প্রাচীন সংষ্কৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। শক, হন,পাঠান মোঘল সবশেষে ইংরেজ ভারতবর্ষের বুকে আক্রমণ করেছে।
১৮৫৯ সালে ব্রিটিশরা একটি প্রাচীর দিয় হিন্দু ও মুসলিমদের প্রার্ধনার জায়গা আলাদা করে দেয়। এভাবেই ৯০ বছর ধরে প্রার্থনা চলছিল। ১৯৪৯-এ প্রথম এই জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতে যায়। সেইসময় রামের মূর্তি স্থাপন করা হয় মসজিদের ভিতরে।
১৯৮৪-তে রাম মন্দির গড়ার দাবি নিয়ে হিন্দুদের একটি কমিটি তৈরি হয়। তিন বছর বাদে একটি জেলা আদালত নির্দেশ দেয়, যাতে ওই বিতর্কিত এলাকা হিন্দুদের প্রার্থনার জন্য খুলে দেওয়া হয়। মুসলিমরা তৈরি করে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি এরপর ১৯৮৯ তে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ওই স্থানে। ১৯৯০ তে রাম মন্দির তৈরির সমর্থনে রথযাত্রা করেন এলকে আদবানী।
১৯৯২ -তে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয় কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। দেশ জুড়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ১০ দিন বাদে তৈরি হয় তদন্ত কমিটি। ১৭ বছর বাদে ২০০৯ সালে সেই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টে আদবানী, বাজপেয়ী সহ ১৭ জনের নাম ছিল।
২০০৩-এ এই মামলার জন্য আদালত সাতজন হিন্দু নেতাকে তলব করে, তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাও ছিলেন। লখনউতে মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতীর বিরুদ্ধে মামলা চলে। এবছরের জুলাই মাসে ডেডলাইন দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ৯ মাসের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা হয়।
২০১০-এ এলাহবাদ হাই কোর্ট একটি রায় দেয়। তাতে বলা হয় ওই বিতর্কিত জমকিতে তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে। নির্মৌহী আখড়া, রাম লাল্লা ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
প্রথমে তিনজন মধ্যস্থতাকারী দেওয়া হয় এই মামলার জন্য। ২০১৯-এর ৬ অগস্ট থেকে প্রত্যেকদিন এই মামলার শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপরির বেঞ্চ। ২০১৯-এর ১৬ অক্টোবর সেই শুনানি শেষ হয়।
৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলায় রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানায়, অযোধ্যার ওই বিতর্কিত অংশ হিন্দুদেরই। মন্দির গড়ে উঠবে সেখানে। আর মসজিদ তৈরি করার জন্য ওই অংশের বাইরে ৫ একর জায়গা বরাদ্দ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত প্রমান পাওয়া যায় যে হিন্দুরা ওই স্থানের অন্দরেও প্রবেশ করেছে। ১৮৫৬ পর্যন্ত নমাজ পড়ার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালে প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করা হত সেই মসজিদ। হিন্দুরা মনে করে ডোমের নীচেই ছিল রামের জন্মস্থান। এটা একটা বিশ্বাস।