দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই স্থান কলকাতা থেকে বেশ কাছে। মাত্র ২৮ কিলোমিটার। এখানেই রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি। এবং তিনি নাকি দু’বার এই বাড়িতে থেকেছেন।
বাংলার এমনই এক ‘তীর্থক্ষেত্রে’ পৌঁছে গিয়েছিলাম। নাম কোদালিয়া। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই স্থান কলকাতা থেকে বেশ কাছে। মাত্র ২৮ কিলোমিটার। এখানেই রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি। এবং তিনি নাকি দু’বার এই বাড়িতে থেকেছেন। এ বাড়ির ইতিহাস বলতে শুরু করলে শেষ হওয়ার নয়। তাই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে না গিয়ে, বাস্তবটুকু নিয়েই এগোই।
দোতলা একটি বাড়ি। একেবারেই ভগ্নদশায়। একতলার একটি কোণে এক বয়স্ক ভদ্রলোক রান্না করছিলেন। বাড়ির কেয়ারটেকার। কিন্তু আগন্তুকদের বাড়ির অন্দরে ঢুকতে দিতে নারাজ তিনি। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরে অবশ্য তাঁর মন গলে। খুলে দেন প্রধান দরজার তালা।
প্রবেশ মাত্রই গায়ে কেমন কাঁটা দিল! এই বাড়িতেই এক সময়ে এসেছিলেন নেতাজি!
খুব সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই দেখি অদ্ভুত এক দরজা। কেমন হেলে পড়েছে। দরজার ডিজাইনটাই কি এমন, নাকি সময়ের ভারে তা হেলে গিয়েছে, বুঝলাম না ঠিক। দরজার ওপাশে একটা টানা বারান্দা। তার পরে সেই ঘর, যেখানে সুভাষচন্দ্র থাকতেন।
অজান্তেই দু’চোখ বুজে এল। প্রণাম করলাম মনে মনে। শিহরিত মনে স্পর্শ করলাম ঘরের দরজা, এই ভেবে যে কখনও হয়তো তিনি হাত রেখেছিলেন এখানে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে দেখা আর স্মরণ করা সেই সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের, যাঁরা হাসতে হাসতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের জন্য।
কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। কেয়ারটেকার ভদ্রলোকের ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। ঘরের অন্দরে ঢুকতে যাচ্ছিলাম, তিনি বারণ করলেন। ‘‘না না, ঘরে একদম ঢুকবেন না। মেঝেটা যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে’’, বললেন তিনি।
দু’টি খাট, কাঠের চেয়ার, কাঠের আলমারি, টেবিল, ইত্যাদি রয়েছে ঘরের মধ্যে। বড় অযত্নে, অবহেলায়। যেন ইতিহাসের এক স্মৃতিভার বহন করে চলেছে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়!
দোতলা থেকেই সামনের বাগানটা ভাল করে দেখলাম। পাশে রয়েছে একটি গোলাঘর। এক সময়ে তার উল্লেখযোগ্য কার্যক্ষমতা থাকলেও, এখন সে নিশ্চুপ। চার পাশে অনর্গল পাখির কলকাকলিতে এক আশ্চর্য পরিবেশ।
সুভাষচন্দ্রের বাড়ি থেকে একটু এগোলেই রয়েছে দুর্গাবাড়ি। পুজো সেখানে আজও হয়, তবে সেই জৌলুস নেই, জানালেন কেয়ারটেকার ভদ্রলোক।
কোদালিয়ায় বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে ‘হরনাথ বীণাপাণি লাইব্রেরি’। সুভাষচন্দ্রের দাদু, হরনাথ বসুর নামানুসারে এই গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯১৭ সালে। বসু পরিবারের একটি লজ বর্তমানে ব্যবহার করা হয় ডাক ও তার বিভাগ হিসেবে।
এখানে কথা বলতে মোটেই মন চায় না। কানে যেন ভেসে আসে ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’। ভারতের স্বাধীনতা-ইতিহাসের সব তীর্থক্ষেত্রেই বার বার যাওয়া উচিত আপামর ভারতবাসীর। স্বাধীনতার অগ্রপথিকরা যেখান দিয়ে হেঁটে গিয়েছেন, সে সব স্থান হোক আমাদের পুণ্যভূমি। তাই এক বিরল পাওনা মনে হয়েছে কোদালিয়ার এই বাড়িটি দেখে।
দরজায় কড়া নাড়ছে স্বাধীনতা দিবস। অফিস-কাছারি সবই বন্ধ থাকবে সেদিন। সুযোগ করে দেখে আসতেই পারেন এই তীর্থভূমি। ভাল লাগবে, হবে এক আলাদা অনুভূতি।
যাতায়াত
— ট্রেন: শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণ শাখার ট্রেন ধরে সুভাষগ্রাম স্টেশন।
— সড়কপথ: গড়িয়া মোড় থেকে অটো বা বাসে কোদালিয়া স্টপেজে নেমে, একটুখানি হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যায় ‘সুভাষের বাড়ি’।