বৌভাতের আসরে আটজন আদিবাসী শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন মাস্টার মশায় দীপ নারায়ণ নায়ক

জামুড়িয়া: অভাবনীয় বৌভাতের সাক্ষী থাকলো জামুড়িয়ার রাজপুর নন্ডীগ্রামের মানুষজন। বৌভাতের আসর থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের আটজন অনাথ শিশুকে সারাজীবনের জন্য লেখাপড়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন মাস্টারমশাই দ্বীপ নারায়ন নায়ক।

লকডাউন শুরুর সময় থেকে এলাকায় অসহায় দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের পুষ্টিকর খাবার ও পোশাক দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন মাস্টার মশাই।তিনি শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবক দের স্বাক্ষর করার কাজে ব্রতী হয়েছেন ।এবং এই কাজে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।বৌভাতের মঞ্চ থেকে সেই সব শিশুরা তাদের অভিভাবকদের স্বাক্ষর করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল এবং স্বাক্ষর করেছে তাদের সম্মান এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬০ এর উর্দ্ধের অভিভাবকরা যারা নিজের নাম লিখতে শিখেছে তাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে আজ এই প্রীতিভোজের মঞ্চ থেকে। এই ঘটনায় নজির গড়লেন মাস্টারমশাই। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেন এলাকার বিশিষ্ট মানুষ জনেরা।

দ্বীপ নারায়ন বাবু বলেন দারিদ্রতা কি তা আমি জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি। বাবা খুব সামান্য টাকায় একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি বলেন বাবার মাসিক বেতন ছিল 500 টাকা পরে সেটা 3000 টাকা হয়ে কর্ম থেকে অবসর নেন। দেবনারায়ণ বাবু বলেন আমি কোনদিন নতুন জামা বা বই কিনতে পারিনি। অন্যের দেওয়া পুরানো জামা প্যান্ট ও বই খাতা নিয়ে আমি পড়াশোনা করেছি। এই দারিদ্রতাকে সামনে থেকে দেখে আমি অসহায় শিশুদের দেখলেই তাদের সাহায্য করতে ইচ্ছে জাগে এবং করেও থাকি। ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমি সেই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।

আমি চাই অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করি যাতে তারা লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং অন্যদেরকেউ সাহায্য করতে পারে। তাই আমার সাধ্যমত সমর্থে রাস্তার মাস্টারমশাই প্রকল্প শুরু করি। এই প্রকল্পতে বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের দরিদ্র অসহায় খুদে শিশুদের নিয়ে পথ চলা শুরু করি। এই রাস্তায় নেমে যে শিশুদের আমি শিক্ষা দিতে পেরেছি, সেই ক্ষুদে শিশুরা তাদের অভিভাবকদের শিক্ষাদান করে স্বাক্ষর করছে। তিনি বলেন এর চেয়ে আর বড় কিছু পাওনা আমার কাছে কি হতে পারে। আমি সেই খুদে শিশুদের ও তাদের অভিভাবকরা যারা আজ স্বাক্ষরিত হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি এই শুভ মঞ্চ থেকে।

নববধূ ঝুমা নায়ক স্বামীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় এবং নিজেকে গর্বিত বলে মনে করেন। ঝুমা দেবি বলেন স্বামীর এই কর্মে চিরকালই পাশে থেকে সাহায্য করবো।