অনেকেই হয়তো জানেন না, দেশের প্রথম ডাকঘর পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে, যা বর্তমানে অবহেলিত

Many people may not know, India's first post office is in East Mednipur Khejuri (West Bengal), which is currently neglected.

পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে দেশের প্রথম ডাকঘরটি আগাছায় ঢেকেছে, সরকারি তৎপরতার অভাবে, অবহেলিত ডাকঘরটিকে এখনও পর্যন্ত হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়নি।

খেজুরির সমাধি ক্ষেত্রটি প্রাচীন খেজুরি বন্দরের একদা সমৃ‌দ্ধি ও দেশি-বিদেশিদের দিনযাপনের অন্তিম নিদর্শন হিসাবে চিহ্নিত৷ কিন্তু ইতিহাসের এই নীরব সাক্ষীটি দীর্ঘকাল অবহেলার শিকার হয়ে বর্তমানে ভগ্নপ্রায়৷

সমাধিস্থলটি প্রাচীর বেষ্টিত হলেও প্রস্তরলিপিগুলি চুরি হয়ে গিয়েছে৷ এখানে মোট তেত্রিশটি সমাধি ছিল৷ তার মধ্যে একুশটি খোদাই করা লিপি ছিল৷ আজ তার কোনও অস্তিত্বই নেই৷ লিপিগুলি প্রায় ১৮০০ খিস্টাব্দের৷

এক নাবিকের সমাধিও রয়েছে৷ ঝোপ ঘেরা সেই সমাধিতে ফলক থাকলেও তা অস্পষ্ট ও ভগ্নপ্রায়৷ কাঁথির পূর্ত বিভাগের সুপারভাইজার মি. এমোস ওয়েস্টের সমাধিটি ১৮৬৫ খিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর বলে প্রেমানন্দ প্রধানের হিজলীনামা বই থেকে জানা গিয়েছে৷

এক সময় খেজুরিতে নির্মিত ডাকঘরটি ভারতবর্ষে সর্ব প্রথম এক বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইউরোপের বিভিন্ন বণিক, নাবিক ও পর্যটকদের সংবাদ আদান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ অনেকগুলি ডাক নৌকার সাহায্যে দূরবর্তী গভীর সমুদ্রে থাকা জাহাজে চিঠিপত্র পৌঁছে দেওয়া হত৷ ডাকঘরের দ্বিতলে একটি দূরবিন ও টেলিগ্রাফ যন্ত্র ছিল বলে বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা নানা সময় তাঁদের লেখা নানা বইয়ে দাবি করেছেন৷

ডাক বিভাগীয় কাজের জন্যে ছিলেন পোস্ট মাস্টার৷ এখানে নিযুক্ত কর্মী, মাঝি, মাল্লা, সারেংদের থাকার জন্য ছিল বারো ঘরের একটি ব্যারাক৷ ডাক বিভাগে ব্যবহৃত নৌকাগুলি জোয়ার-ভাটা, সমুদ্র বায়ু ও সামুদ্রিক নানা সমস্যায় জাহাজে ডাক পৌঁছতে দেরি হত৷

নদীপথে ছিল বাঘ ও ডাকাতের ভয়৷ সুন্দরবন অঞ্চলের ডাক বিলির সময় কর্মীরা বাঘের কবলে পড়েন৷ ফলে নৌকায় ডাক পরিবহণ থমকে যায়৷ ১৮০৬ ‌খিস্টাব্দের ২০ আগষ্ট কলকাতায় গেজেটে প্রকাশিত পোস্টমাস্টার জেনারেলের বিজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য মেলে৷

পরে খেজুরি পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ কলকাতায় দ্রুত খবর আদান প্রদানের জন্য অভিনব সাঙ্কেতিক পন্থা অবলম্বন করেন৷ সেমাফোর বা সাঙ্কেতিক অক্ষরের প্রচলন তৎকালীন ডাক কর্মীদের উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয়৷ খেজুরি পোস্ট অফিস লাগোয়া উঁচু মঞ্চ থেকে হাত ও পতাকা নেড়ে নানা ভঙ্গিমায় এই সংকেত দেওয়া হত৷ ওই মঞ্চের ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়৷