আসানসোলের প্রতিবেশী শহর হল রানীগঞ্জ। যাকে এক নামে সকলেই কয়লাখনি অঞ্চল বলে চেনে, মানচিত্রে যার অবস্থান উল্লেখযোগ্য। এখানে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণের একত্র মেলবন্ধন ঘটেছে। হিন্দুধর্মের কোনো উৎসবে যেমন মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়,ঠিক তেমনই মুসলিমদের মহরমই হোক বা খ্রিষ্টানদের বড়দিন উপলক্ষ্যে বর্ণহিন্দুদের প্রাধান্য চোখে পড়ার মতো। আর তাইতো রানীগঞ্জের বিখ্যাত রোনায় মেলাতে,যা প্রধানত মুসলিম মেলা বলে পরিচিতি পেলেও সেখানে কাতারে কাতারে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের আবির্ভাব লক্ষ করা যায়।
অন্যদিকে এখানে বিবাহ-অনুষ্ঠানের জন্য তো Marriage Hall বা ভবনের ছড়াছড়ি,তার সাথে Decorating মহলও দারুণভাবে আকর্ষণীয়। এসবের পাশাপাশি রানীগঞ্জের সোনা তো বহু জনপ্রিয়। বহু দূর-দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে গয়না কেনার জন্য ভিড় জমায়।
দামোদর নদের করিডোরে অবস্থিত এই শহরটিকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের শিল্প ব্যপক প্রসার লাভ করেছে।জুটমিলের পাটশিল্প,পেপারমিলের কাগজশিল্প,মঙ্গলপুরের কারখানা ছাড়াও দুর্গাপুর ব্লকের অন্তর্গত DVC শিল্প কারখানা বহু মানুষের রুটি রুজির আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।এর পাশাপাশি রানীগঞ্জ ও জামুরিয়ার শ্যাম স্টিল ইস্পাত কারখানাও যথেষ্ট উন্নত।নিজের জেলার মানুষ তো এই শিল্পের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হইয়েইছে,উপরন্তু দামোদর নদের ওপারের ভিন জেলার মানুষও এই শিল্পের দ্বারা স্বাবলম্বী হতে পেরেছে।
যাইহোক এসব কিছুকে একদিকে রেখেও মানুষের রসনা পরিতৃপ্তির জন্য সবার প্রথমে উল্লেখ করতেই হয় মিষ্টির কথা।ভুরিভোজের জন্য মিস্টির প্রধান ভূমিকাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আর এই মিস্টির খ্যাতি রানীগঞ্জে সর্বাংশ জুড়ে। ভোজনরসিক বাঙালি থেকে শুরু করে অ-বাঙালি মুসলমান সকলেই রানীগঞ্জের মিস্টির গুণগ্রাহী।
এসব কিছুকে ছাপিয়ে উঠেছে রানীগঞ্জের বইমেলা,যা দীর্ঘ 25 বছর ধরে চলে আসছে চিনকুঠি ময়দানে,সমান জনপ্রিয়তার সাথে। এসবের সাথে বইমেলার বইয়ের ভিড়ে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চমক,তার সাথে প্রিয় নায়ক-নায়িকাদের দেখার জন্য থাকে অগুণতি মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই এই মেলায় সম উৎসুক্যের সাথে মিলিত হয়।
শিক্ষার প্রসারে অন্যান্য উন্নত শহরের মতো রানীগঞ্জেও সমানভাবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একসাথে এগিয়ে চলেছে। এই অঞ্চলে Junior Nursery School-এর সাথে সাথে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথকীকরন হাইস্কুল রয়েছে, রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, মাড়োয়ারী সনাতন,গান্ধীস্মৃতি উচ্চবালিকা বিদ্যালয়, যমুনাময়ী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়, বাসন্তী গোয়েঙ্কা, প্রভৃতি। আবার তেমনি ছেলে ও মেয়েদের উভয়ের জন্য একত্রে উচ্চবিদ্যালয়-ও গড়ে উঠেছে।যেমন-বল্লভপুর রামগোপাল সরাফ বিদ্যাপীঠ, সিয়ারসোল রাজ হাইস্কুল। আবার তেমনি ছেলে ও মেয়েদের উভয়ের জন্য একত্রে উচ্চবিদ্যালয়-ও গড়ে উঠেছে। স্কুল উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে দুটি মহাবিদ্যালয়-একটি হল High Rank-এ অবস্থানকারী সবার পরিচিত TDB College,আর একটি হল Raniganj Girls’ Collage. এছাড়াও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্যে তো রয়েছেই সেইসব প্রতিষ্ঠান,যার মধ্যে মাইনিং কলেজের নাম সর্বজনবিদিত।
চিকিৎসাশাস্ত্রের দিকটি তুলে ধরতে গেলে আমরা এখানে সমস্ত Specialist Doctor খুঁজে পাব, যাঁদের Address & Contact No. পেতে হলে আমাদের www.eFindout.com এ প্রবেশ করতে হবে। রয়েছে ‘আনন্দলোক’র মতো উন্নত পরিষেবা যুক্ত হাসপাতাল, রাজ্যের 12 টি শাখার মধ্যে যার একটির অবস্থান এই রানীগঞ্জে। আনন্দলোক হাসপাতাল▪সিয়ারসোল▪রানীগঞ্জ
সবশেষে রানীগঞ্জের নান্দনিক দিকটির কথা না তুলে ধরলে অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাই প্রথমেই মনে আসে সুকান্ত উদ্যান ও আনন্দলোক পার্কের কথা আর অবশ্যই অঞ্জনা সিনেমা হল, গ্রীষ্মের বিকেল হোক বা শীতের সকাল এখানের বক্স-অফিস সবসময় জমজমাট। এছাড়াও প্রত্যক্ষ চলচিত্রের নিদর্শন হিসাবে বাঙালির বহু পুরনো নস্টালজিয়া জুড়ে আছে যাত্রাপালার সঙ্গে। সেই যাত্রাপালার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে পরিচালনা করে থাকে রানীগঞ্জের রানীসায়ের মোড়ে অবস্থিত যাত্রা অফিস গুলি। আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রাপালার জন্য যাত্রাকমিটির উদ্যোক্তারা এখানেই বুকিং করে।
আর হ্যাঁ……. রানীগঞ্জের আশেপাশের গ্রামকে কেন্দ্র করে নলেন গুড় উৎপাদনের স্বাদের যে মহিমা তা আমাদের সত্যিই গর্বের বিষয়। শীতের ভোরের খেজুর রসের প্রেমে রানীগঞ্জ বাসী সকলেই বিভোর।
রানীগঞ্জ সম্পর্কে আরো তথ্য পেতে নিয়মিত জুড়ে থাকুন আমাদের eFindout.Com ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ!